হযরত ওমর (রাঃ) এর শাসন ব্যবস্থা কেমন ছিল
প্রিয় পাঠক, আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আল্লাহর রহমতে আপনারা সবাই ভাল আছেন। আপনি নিশ্চয়ই হযরত ওমর (রাঃ) এর শাসন ব্যবস্থা কেমন ছিল তা জানতে আমার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেছেন। আমার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আমরা সবাই হযরত ওমর এর ব্যাপারে জানি। আবার কেউ না জেনেও থাকবেন। চলুন জানা যাক।
হযরত ওমর রাঃ এর শাসনব্যবস্থা ছিল সব ক্ষেত্রেই দৃষ্টান্তমূলক। সব বিষয়ে খলিফা নিজেকে মনে করতেন জবাবদিহিতার মুখাপেক্ষী। শাসনব্যবস্থা ছিল ইসলামভিত্তিক। চলুন তার বিস্তারিত জানা যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃহযরত ওমর (রাঃ) এর শাসন ব্যবস্থা কেমন ছিল
- হযরত ওমর (রাঃ) এর শাসন ব্যবস্থা কেমন ছিল
- হযরত ওমর (রাঃ) এর শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য
- হযরত ওমর (রাঃ) এর শাসনামলে শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রচার
- হযরত ওমর (রাঃ) এর ব্যক্তিত্ব ও বৈশিষ্ট্য
- হযরত ওমর (রাঃ) এর বিজয় ও সাম্রাজ্য বিস্তার
- হযরত ওমর (রাঃ) এর খলিফা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ
- হযরত ওমর (রাঃ) ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ)এর ঘনিষ্ঠ সাহাবী
- হযরত ওমর (রাঃ) এর জনকল্যাণমূলক কাজ
- হযরত ওমর (রাঃ) আরব জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা
- শেষ মন্তব্য, হযরত ওমর (রাঃ) এর শাসন ব্যবস্থা কেমন ছিল
হযরত ওমর (রাঃ) এর শাসন ব্যবস্থা কেমন ছিল
ইসলামের ইতিহাসে খোলাফায়ে রাশেদীনের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসন ব্যবস্থার যুগ বলা হয়। এ যুগে চার খলিফা হযরত আবু বক্কর (রাঃ), হযরত ওমর (রাঃ) , হযরত ওসমান(রাঃ) ও হযরত আলী(রাঃ) ন্যায়, আদর্শ, দয়া, পরোপকার ও ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এমন এক প্রশাসন কায়েম করেছিলেন যা মানব সভ্যতার ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে হযরত ওমর ফারুক (রাঃ )এর শাসনকাল ছিল ইসলামী প্রশাসনের স্বর্ণযুগ।
তিনি ছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর ঘনিষ্ঠ সাহাবী ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা এবং একজন বিচক্ষণ সাহসী ও ন্যায় পরায়ন শাসক তার শাসনকাল ছিল প্রায় ১০ বছর ৬ মাস (৬৩৪ থেকে ৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ)। এ সময় ইসলামী খেলাফত শুধু আরো উপদ্বীপে সীমাবদ্ধ ছিল না বরং সিরিয়া, মিশর, ইরাক, ইরান সহ বিশাল অঞ্চল ইসলামের পতাকা তলে আসে। কিন্তু তার শাসনের মূল উদ্দেশ্য ছিল সাম্রাজ্য বিস্তার নয় বরং নেই সাম্য ও শৃঙ্খলাপন্ন শাসনব্যবস্থা কায়েম করা।
আরো পড়ুনঃবিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনী
হযরত ওমর (রাঃ) এর শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য
হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ও ন্যায় বিচারের পথিক হিসেবে পরিচিত তার শাসনকাল ছিল ইসলামিক ইতিহাসের স্বর্ণযুগ। তিনি প্রশাসনকে এমনভাবে সাজিয়েছিলেন যা আজকের আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থাও আদর্শ হতে পারে। প্রথম বৈশিষ্ট্য হল ন্যায় বিচার। ধনী-গরীব, মুসলিম অমুসলিম সবার জন্য সমান বিচার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এমনকি গভর্নর বা ক্ষমতাবানব্যক্তিরাও আইনের উর্ধ্বে ছিলেন না তার কাছে সত্যের মূল্য সর্বাধিক ছিল । দ্বিতীয়তঃ তিনি প্রশাসনকে প্রদেশ ভিত্তিক কাঠামোতে বিভক্ত করেছিলেন।
প্রতিটি প্রদেশে গভর্নর কাজী ও অন্যান্য কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে তাদের ওপর নিয়মিত তদারকি করতেন। এতে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা রোধ হয়েছিল। তৃতীয়তঃ আর্থিক ব্যবস্থাই তিনি বায়তুল মাল প্রতিষ্ঠা করেন। কৃষি খাজনা, যাকাত, জিজিয়া ও গনিমতের আয় সেখানে জমা হতো। এ আয় থেকে সেনাদের বেতন দরিদ্রের ভাতা ও জনকল্যাণমূলক কাজ সম্পাদিত হতো। চতুর্থত , সামাজিক নেই ও কল্যাণমূলক কার্যক্রমের জোর দেন। এতিম, বিধবা, বৃদ্ধ এমনকি অমুসলিম প্রজাদের জন্য ভাতা নির্ধারণ করেন তার কাছে প্রতিটি নাগরিকই রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল।
হযরত ওমর (রাঃ) এর শাসনামলে শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রচার
হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর শাসনকাল ইসলামী ইতিহাসের স্বর্ণযুগ হিসেবে বিবেচিত। তার শাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রচারকে সুসংগঠিত করা। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন একটি শক্তিশালী সমাজ গড়তে হলে জ্ঞান চর্চা ও সঠিক ধর্মীয় শিক্ষা অপরিহার্য প্রথমত তিনি কোরআন শিক্ষার প্রচারে বিশেষ ব্যবস্থা নেন বিভিন্ন শহরে কোরআন শেখানোর জন্য শিক্ষক নিয়োগ করেন এবং মসজিদকে শুধু নামাজের জায়গা নয় বরং শিক্ষা আলোচনা কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করেন।
কোরআনের তেলাওয়াত, হিফজ ও তাফসির শিক্ষাকে রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব বানিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত তিনি মক্তব ও মাদ্রাসার বিকাশে উৎসাহ দেন নতুন মুসলিমদের জন্য ইসলামের মৌলিক শিক্ষা নিশ্চিত করেন যাতে তারা সঠিকভাবে দিন বুঝে পালন করতে পারে পাশাপাশি আরবি ভাষা শিক্ষা কে গুরুত্ব দেন কারণ কোরআন ও সরিয়া গভীর উপলব্ধি এর মাধ্যমে সম্ভব। তৃতীয়ত ধর্মীয় প্রচারে তিনি বিশেষ মনোযোগ দেন বিজিত অঞ্চলে মুসলিম সেনাদের উপস্থিত স্থাপন করার পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষার প্রচারের জন্য আলেম ও শিক্ষকদের পাঠান
তিনি খ্রিস্টান ও ইহুদীদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নিশ্চিত করেন যাতে তারা নিজেদের ধর্ম পালন করতে পারে ।এভাবে ইসলাম শুধুমাত্র যুদ্ধের মাধ্যমে নয় বরং জ্ঞান ন্যায় ও সহনশীলতার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। চতুর্থত, তিনি শিশু নারী ও সাধারন মানুষের জন্য শিক্ষা সহজলভ্য করতে সচেষ্ট হন অনেক স্থানে তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেন এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভাতা প্রদান করেন সর্বোপরি হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর শাসনকালে শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রচার এতটাই ফলপ্রসূ হয়েছিল যে ইসলাম দ্রুত বিস্তার লাভ করে এবং মুসলিম সমাজ জ্ঞান নীতি ও আদর্শে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।
হযরত ওমর (রাঃ) এর ব্যক্তিত্ব ও বৈশিষ্ট্য
হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ও ইসলামের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ন্যায়পরায়ণ শাসক। তার ব্যক্তিত্ব এত শক্তিশালী ছিল যে ইসলাম গ্রহণের আগে তিনি ছিলেন মুসলমানদের সবচেয়ে কঠোর শত্রু। আর ইসলাম গ্রহণের পর তিনি হয়ে ওঠেন ইসলামের সবচেয়ে শক্তিশালী রক্ষক। ডাকনাম ছিল আল ফারুক অর্থাৎ যিনি সত্য মিথ্যার পার্থক্য করতে পারতেন। প্রথমত, তার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল ন্যায় বিচার।
তিনি ধনী গরিব মুসলিম-অমুসলিম সবার ক্ষেত্রে ন্যায় নিশ্চিত করতেন। একবার মিশরের গভর্নরের ছেলের অন্যায় প্রমাণিত হলে সাধারণ মিশরীয় কে শাস্তি দেওয়ার অধিকার দিয়েছিল। এতে বোঝা যায় তিনি কাউকেই আইনের ঊর্ধ্বে রাখেন না। দ্বিতীয়তঃ তিনি ছিলেন সাহসী ও ধীরুসে দৃঢ়চেতা। হিজরতের সময় তিনি প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়ে মক্কা থেকে মদিনায় চলে যান। যা তার অদম্য সাহসের নির্দেশন। তৃতীয়ত তার জীবন যাপন ছিল অত্যান্ত সাধারন খলিফা হয়েও তিনি সাধারণ মানুষের মতো পোশাক করতেন শুকনো রুটি ও সাধারণ খাবার খেতেন ।
অনেক সময় নিজের কাঁধে খাদ্যের বোঝা নিয়ে দরিদ্রের ঘরে পৌঁছে দিতেন। চতুর্থত, তিনি ছিলেন মানবপ্রেমী নেতা। রাতে ছদ্মবেশে বের হয়ে মানুষের কষ্ট খুজে বের করতেন এবং তাদের সাহায্য করতে অমুসলিম প্রজাদের প্রতিও তিনি সমান সহানুভূতিশীল ছিলেন। হযরত ওমর এর ব্যক্তিত্বে সাহস নেই বিনয় মানবপ্রেমী ও আল্লাহ ভীতি একত্রিত হয়েছিল। তার জীবন ও আদর্শ আজও মুসলিম সমাজ ও মানবজাতির জন্য চিরকালীন শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা।
হযরত ওমর (রাঃ) এর বিজয় ও সাম্রাজ্য বিস্তার
হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) এর খিলাফতকাল ছিল ইসলামী সাম্রাজ্যের বিস্তারের স্বর্ণযুগ। তিনি ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে খলিফা হওয়ার পর মাত্র ১ দশকের মধ্যে ইসলামী শাসন ভূমি আরব উপদ্বীপ দাঁড়িয়ে এশিয়া আফ্রিকা ও ইউরোপের বিশাল অংশে বিস্তৃত হয়। তার শাসনামলে মুসলিম সেনারা সিরিয়া, ফিলিস্তিন, জেরুজালেম, ইরাক, ইরান ও মিশর জয় করে। বিশেষভাবে জেরুজালেম বিজয়ের সময় তিনি খ্রিস্টান নেতাদের সাথে শান্তিপূর্ণ চুক্তি করেন এবং তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চিত করেন।
এটি তার ন্যায় ও সহনশীলতার দৃষ্টান্ত। হযরত ওমর এর বিজয় শুধু সাম্রাজ্য বিস্তারী সীমাবদ্ধ ছিল না বরং জয়কৃত অঞ্চলে ন্যায়বিচার কর ব্যবস্থা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করা ছিল তার মূল লক্ষ্য। তার পারদর্শী নেতৃত্বের কারণে ইসলামী সাম্রাজ্য দ্রুত বিশ্বশক্তিতে রূপান্তরিত হয় এবং মানব সভ্যতায় নতুন দিগন্তের সূচনা হয়। হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর জীবনী থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।
আরো পড়ুনঃ
হযরত ওমর (রাঃ) এর খলিফা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ
হযরত আবু বক্কর সিদ্দিক (রাঃ) মৃত্যু শয্যায় মুসলিম সমাজের সঙ্গে পরামর্শ করে হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) কে তার উত্তরখারি মনোনীত করেন । ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন দায়িত্ব গ্রহণের সময় তিনি অত্যন্ত বিনয় ছিলেন। নিজের প্রথম খুতবায় তিনি বলেন আমি জানি আমি তোমাদের সেরা নই, যদি আমি সঠিক পথে থাকি। তবে আমাকে সহায়তা করো। আর যদি অন্যায় করি তবে আমাকে সোজা করে দাও । এই বক্তব্যই প্রমাণ করে তিনি ছিলেন ন্যায় ও সত্যের প্রতি অবিচল।
খিলাফত গ্রহণের পর তার সামনে বড় চ্যানেল ছিল বিশাল রাষ্ট্র পরিচালনা করা আবু বক্কর (রাঃ) এর সময়ে ইসলামী রাষ্ট্র আরব উপদ্বীপে সীমিত থাকলেও তার সময় দ্রুত সিরিয়া, ইরাক, ইরান ও মিশর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এ কারণে তিনি প্রশাসনকে প্রদেশ ভিত্তিক ভাগ করে এবং গভর্নর ও কাজী নিয়োগ দেন। খলিফা হিসেবে তার দায়িত্ব ছিল শুধু রাষ্ট্র পরিচালনা নয় বরং জনগণের সেবা করা তিনি নিজেকে শাসক নয় বরং জনগণের খেদমতগার মনে করতেন। তার এই দৃষ্টিভঙ্গি খিলাফত কে ন্যায় কল্যাণ ও ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসনব্যবস্থার রূপ দেয়।
হযরত ওমর (রাঃ) ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ)এর ঘনিষ্ঠ সাহাবী
হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সাহাবী। ইসলাম গ্রহণের আগে তিনি ছিলেন মুসলমানদের কড়া বিরোধী। কিন্তু কুরআনের আয়াত শোনার পর তার হৃদয় নরম হয়ে যায় এবং তিনি সত্যকে গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি মুসলিম সমাজের শক্তি ও সাহস যোগান। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে অত্যন্ত ভালবাসতেন এবং তার মতামতের গুরুত্ব দিতেন। বহুবার কুরআনের আয়াত ওমর এর প্রস্তাবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে নাযিল হয়েছে। যা তার অন্তর্দৃষ্টি ও ঈমানের দৃঢ়তার প্রমাণ।
তিনি সর্বদা নবীজির পাশে থাকতেন যুদ্ধে শান্তিতে আলোচনা ও সমাজ পরিচালনায় হিজরতের সময় তিনি প্রকাশ্যে মক্কা ছেড়ে মদিনায় যান, যা তার সাহসিকতার নির্দেশন। নবীজি তাকে আল ফারুক উপাধি দেন, যার অর্থ সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী। তিনি শুধু সাহসী যোদ্ধাই ছিলেন না বরং একজন নিবেদিত প্রাণ সঙ্গী ছিলেন। নবীজির পরামর্শে তিনি কাজ করতেন এবং তার প্রতি অনুরাগে জীবন উৎসর্গ করতেন । তাই হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ঘনিষ্ঠতম সাহাবীদের একজন যার অবদান ইসলাম চিরস্মরণীয়।
হযরত ওমর (রাঃ) এর জনকল্যাণমূলক কাজ
হযরত ওমর ফারুক (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ও জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তার শাসনামলে তিনি সর্বদা জনগণের সেবা ও কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিতেন। তিনি বায়তুল মাল প্রতিষ্ঠা করেন যেখানে রাষ্ট্রের আয় জমা রেখে দরিদ্র, এতিম, বিধবা ও অক্ষমদের জন্য ভাতা নির্ধারণ করা হয়। এমনকি অমুসলিম বৃদ্ধদের জন্যও তিনি ভাতা চালু করেন যা তার মানব প্রেমের প্রমাণ।
তিনি রাস্তা, সেতু, কূপ, খাল ও সরাইখানা নির্মাণ করান যাতে সাধারণ মানুষ ভ্রমন ও বাণিজ্যিক সুবিধা পায় । দুর্ভিক্ষের সময় তিনি নিজ হাতে খাদ্য বয়ে নিয়ে দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করতেন। হযরত ওমর বিশ্বাস করতেন শাসকের দায়িত্ব হল জনগণের সেবা করা। তার জনকল্যাণমূলক কাজের ফল ইসলামী সমাজে শান্তি সমৃদ্ধি ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল।
হযরত ওমর (রাঃ) আরব জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা
হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) ছিলেন একজন দূরদর্শী খলিফা। যিনি শুধু ইসলাম নিয়ে সমাজ নয় সমগ্র আরব জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন আরব জাতির ঐক্য ও শৃঙ্খলা ইসলামের অগ্রযাত্রার জন্য অপরিহার্য। তাই তিনি গোত্র ভিত্তিক বিভাজন দূর করে একক মুসলিম উম্মাহ গঠনে কাজ করেন। তার শাসনামলে আরব জাতি যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে মুক্ত হয়ে শিক্ষা শাসন ও সামাজিক উন্নয়নের পথে অগ্রসর হয়।
তিনি ন্যায় ভিত্তিক প্রশাসন ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করে আরবদের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করেন। যদিও তিনি ইসলামের সার্বজনীন মূল্যবোধে বিশ্বাসী ছিলেন। তবুও আরব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করা তার অন্যতম লক্ষ্য ছিল। তার নেতৃত্বে আরবরা এক বিশাল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হয়, যা ইসলামের ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত।
আরো পড়ুনঃ
শেষ মন্তব্য, হযরত ওমর (রাঃ) এর শাসন ব্যবস্থা কেমন ছিল
হযরত ওমর রাঃ এর শাসন ব্যবস্থা কেমন ছিল তা আপনি এখন নিশ্চয়ই জেনে গেছেন। তাও আবার একটু সংক্ষেপে বলছি তার শাসনব্যবস্থা ছিল, ন্যায় সমতা ও জনকল্যাণের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তিনি ইসলামিক খেলাফতের কাঠামোকে সুদৃঢ় করেন এবং জনগণের কল্যাণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেন। প্রশাসনিক সংস্থার বিচার ববস্থার স্বচ্ছতা, বায়তুল মাল প্রতিষ্ঠা শিক্ষা বিস্তার, অবকাঠামো নির্মাণ এবং দরিদ্র ও অভাবগ্রস্থদের সহায়তা তার শাসনের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল। তার শাসন আমলে আরব জাতি শুধু রাজনৈতিকভাবে নয় অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রেও সমৃদ্ধ অর্জন করে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url