তুলসী পাতার ২০টি উপকারিতা ও ১৫টি অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

তুলসী পাতার ২০টি উপকারিতা ও ১৫টি অপকারিতা সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই জানার জন্য আমার এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি শুধু আপনার জন্যই। আসলে তুলসী পাতা আমাদের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

তুলসী পাতার ২০টি উপকারিতা ও ১৫টি অপকারিতা

তুলসী পাতার রস নানা ধরনের গুণাবলীর কারণে যুগ যুগ ধরে ঔষধি গাছ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। তুলসী পাতা ঔষধ হিসেবে কাজ করে এই কারণে গ্রামের প্রত্যেকটি বাড়িতে তুলসী গাছ লাগিয়ে থাকে বা দেখা যায়। চলুন তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক। 

পোস্ট সূচীপত্রঃ তুলসী পাতার ২০টি উপকারিতা ও ১৫টি অপকারিতা 

তুলসী পাতার ২০টি উপকারিতা ও ১৫টি অপকারিতা

তুলসী পাতার ২০টি উপকারিতা ও ১৫টি অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত থাকছে। এই আর্টিকেলে পাতার গুনাগুন সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি। তুলসী গাছ একটি ঔষধি গাছ যা মানুষের বিভিন্ন উপকারে আসে। প্রাচীনকাল থেকেই তুলসী গাছের ব্যবহার হয়ে আসছে। তুলসী পাতার গুনাগুন বলে শেষ করা যাবে না। যদি আপনি সুস্থ থাকতে চান তাহলে প্রতিদিন তুলসী পাতা চিবিয়ে খান তাহলে ঠান্ডা সর্দি কাশি রোগ সবকিছু ভালো হয়ে যাবে। আপনার বাসার আশেপাশে যেখানে আলো বাতাস থাকে সেখানে আপনি তুলসী গাছ লাগিয়ে রাখতে পারেন। 

শিশু থেকে শুরু করে প্রতিটি মানুষের তুলসী পাতা খাওয়া উচিত। তবে বাচ্চাদের সর্দি-কাশি হলে তুলসী পাতার রস এবং মধুর সাথে মিশে খেলে কাশি কমে যায়। বুকে কফ বসে গেলে সকালবেলা একগ্লাস পানিতে তুলসী পাতা চা পাতা এবং আদা ভালোভাবে ফুটিয়ে তাতে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারলে আপনার কথ ভালো হয়ে যাবে। আবার মাথা ব্যাথা হলে তুলসী পাতার চা খেতে পারেন তাহলে আপনার মাথা ব্যাথা ভালো হয়ে যাবে। গলা ব্যথা হলে তুলসী পাতা পানিতে দিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে ঘর ভাড়া করলে আপনার গলা ব্যথা আরাম হয়ে যাবে। 

অন্যদিকে তুলসী পাতার কিছু অপকারিতা ও রয়েছে। তুলসী পাতা ঔষধি গাছ হলেও তুলসী পাতার অতিরিক্ত ব্যবহার মানুষের জীবন নাশকের কারণও হয়ে থাকে। তুলসী পাতা অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে আপনাদের শ্বাসকষ্ট এবং সেইসাথে কাশির সাথে রক্ত উঠতে পারে। তুলসী পাতা গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত খেলে গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাওয়ার থাকে। অতিরিক্ত তুলসীপাতা খেলে নারী ও পুরুষের উর্বরতা কমে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দেখা গেছে তুলসী পাতা শুক্রানুর সংখ্যা কমায়, প্রোস্টেট, এন্ডিনাল গ্রন্থি এবং ডিম্বাশয় এর ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে বংশবৃদ্ধি হরমোন এর কার্যকারিতা কমে যায়।

তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম

প্রাচীনকাল থেকেই তুলসী পাতার গুণাগুণের কারণে যুগ যুগ ধরে মানুষের বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে বা ব্যবহার হয়ে আসছে। তুলসী পাতা আমাদের শরীরের জন্য একটি উপকারী উপাদান। এতে নানা ধরনের ঔষধি গুনাগুন আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকার করে। তবে তুলসী পাতা খাওয়ার কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। বিভিন্ন সমস্যার জন্য তুলসী পাতা বিভিন্নভাবে খেতে হয়। তুলসী পাতা নিয়ম মেনে খেলে বিভিন্ন অসুখ দূর হয়ে যায় চলুন তুলসী পাতা খাওয়ার কিছু নিয়ম সম্পর্কে জানা যাকঃ

  • প্রথমে এক কাপ পানিতে ১০ টি তুলসী পাতা দিয়ে পাঁচ থেকে দশ মিনিট ফুটিয়ে নিন তারপর কিছু দিয়েছে কে নিয়ে পান করুন তাহলে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
  •  এক কাপ পানিতে দশটি তুলসী পাতা লবঙ্গ ও আদা কুচি একসাথে মিশিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে খেলে গলার খুসখুসে কাশি দূর হয়ে যায়। 
  • শিশুদের জন্য তুলসী পাতার রস এবং মধু মিশিয়ে খাওয়ালে সর্দি-কাশি এবং জ্বর কমে যায় ।
  • তুলসী গাছের বীজ সংরক্ষণ করে রাখা হয় কারণ দীর্ঘদিন ধরে কাশিতে ভোগা মানুষের জন্য তুলসী পাতার বীজ গুড়া করে এবং দারচিনি, লবঙ্গ গুড়া এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে দীর্ঘ সময় ফুটাতে হবে এবং ফুটন্ত পানি এবং মধু মিশিয়ে খেলে পুরাতন কাশি খুব সহজেই দূর হয়ে যায়।
  • প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পাঁচ থেকে ছয়টি তাজা তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। 
প্রতিদিন আপনি যদি তুলসী পাতা খেতে পারেন তাহলে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পেতে পারেন।

তুলসী পাতার ক্ষতিকর দিক

তুলসী পাতার যেমন উপকারিতা ও রয়েছে তেমনি রয়েছে ক্ষতিকর দিক। তুলসী পাতার গুনাগুন সম্পর্কে আমরা প্রত্যেকেই জানি। কিন্তু আমরা বলতে পারব না যে তুলসী পাতার ক্ষতিকর দিক তাই আজকের এই আর্টিকেলে থাকছে তুলসী পাতার কিছু ক্ষতিকর দিক। তালিকা আকারে তৈরি করে দেওয়া হল 
  1. অতিরিক্ত তুলসীপাতা গ্রহণের ফলে নারী ও পুরুষের শুক্রাণু কমে যায় যার ফলে বংশবৃদ্ধিকারী হরমোনের কার্যকারিতা হারিয়ে যায়। 
  2. গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
  3. যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা যদি অতিরিক্ত তুলসীপাতা গ্রহণ করে তাহলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।
  4. তুলসী পাতায় অতিরিক্ত পটাশিয়াম থাকার ফলে আমাদের রক্তচাপ কমে যেতে পারে। তাই নিম্নচাপে সমস্যা দেখা দিলে তুলসী পাতা না খাওয়াই ভালো। 
  5. অতিরিক্ত তুলসীপাতা সেবনে নারীদের বন্ধ্যাত্বের কারণ বলে চিকিৎসকরা মনে করেন। তাই মহিলাদের অতিরিক্ত তুলসী পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো। 
  6. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী কেউ যদি নিয়মিত ব্যাথার অসদ খান তাহলে তুলসী পাতা না খাওয়াই ভালো। কারণ যকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। তুলসী পাতা ব্যাথার ওষুধ এবং ব্যথা নাশক হিসেবে কাজ করে। 
  7. অতিরিক্ত তুলসী পাতা সেবনে আপনার শ্বাসকষ্ট, গলা খসখসে এবং কাশির সঙ্গে রক্ত উঠতে পারে।
  8. যাদের হার্টের সমস্যা রক্ত পাতলা করার জন্য ওষুধ খান তারা তুলসী পাতা খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন থাকবেন। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  9. অতিরিক্ত তুলসী পাতা সে বনে আপনার মুখের জ্বালা পোড়া এলার্জি বা হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আপনাকে নিয়মিত অপরিমার মত তুলসী পাতা সেবন করতে হবে। 
  10. আপনি যদি নিয়মিত তুলসীপাতা সেবন করেন তাহলে আপনার কিডনির উপর প্রভাব পড়তে পারে। 
  11. আপনি বিভিন্ন সমস্যার কারণে বিভিন্ন ওষুধ খান তার সঙ্গে যদি তুলসী পাতা খান তাহলে ঔষধের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।
  12. তুলসী পাতা দীর্ঘদিন ধরে খেলে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। 

তুলসী পাতার উপকারিতা ও বৈশিষ্ট্য 

প্রাচীনকাল থেকেই সর্দি কাশির জন্য তুলসী পাতা মহা ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। আমরা সকলেই জানি সর্দি কাশি হলে তুলসী পাতার রস এবং মধু মিশিয়ে খেলে দ্রুততা সেরে যায়। নিয়মিত তুলসীপাতা খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তুলসী পাতা চুলকানি অ্যাজমা ও ফুসফুসের সমস্যা মোকাবেলায় খুব ভালো কাজ করে থাকে। তুলসী পাতা দারচিনি এলাচ একত্রে পানি দিয়ে ফুটিয়ে চা বানিয়ে খাওয়া হলে নানা ধরনের রোগ-বালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

আবার আমাদের শরীরের যেকোনো ক্ষতস্থানে তুলসী পাতা ব্যবহার করলে তা ভালো ফল পাওয়া যায়। ক্ষতস্থানে তুলসী পাতা বেটে লাগালে তা দ্রুত সেরে যায়। এছাড়াও ক্যান্সারের মতো অসুখ দূর করতে তুলসী পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তুলসী পাতায় রয়েছে ফাইটোকেমিক্যাল, রোসমারিনিক এসিড, মাইরেটিনাল, লিউটিউনিল, এপিজেনিন এ সকল উপাদান ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে। 

এছাড়াও এতে থাকা রেডিও প্রটেক্টিভিটিক উপাদান টিউমারের কোষ ধ্বংস করে দেয়। আমাদের শরীরের বিষক্রিয়া পদার্থ বের করে দেয়। তুলসী পাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়ান উপাদান আমাদের শরীর থেকে টক্সিন বের করে আনতে সহায়ক। দাঁতের মাড়ি এবং মজবুত করতে তুলসী পাতা কার্যকর ভূমিকা রাখে। 

মধু ও তুলসী পাতার উপকারিতা 

তুলসী পাতা ও মধু সবই প্রকৃতির দান। যা আমাদের সুস্থ রাখতে অসাধারণ ভূমিকা রাখে। মধু ও তুলসী পাতার উপকারিতা বলে শেষ করার নয়। দুদিন তো তুলসী পাতা ও মধু বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক। মধু ও তুলসী পাতা একত্র খেলে কাশি পেট কামরনো, বাচ্চাদের পেট মোচড় ভাব, ঠান্ডা ও লিভারের যেকোনো সমস্যায় ব্যবহার হয়ে থাকে। মধু ও তুলসী পাতা শেকড় ম্যালেরিয়া জ্বরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক হিসেবে প্রতিদিন সকালে গোলমরিচ ও তুলসী পাতার রস খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। 

তুলসী পাতা এবং মধুতে রয়েছে আন্টি ইনফ্ল্যামেটরি  উপাদান যা জ্বালাপোড়া কাশি হাঁপানি হার্টের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মধু ও তুলসী পাতার সংমিশ্রণে একসঙ্গে সেবন করলে বিভিন্ন রোগ বালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং রূপ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। মধুতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এনজাইম ও প্রাকৃতিক চিনি যা আমাদের শরীরকে শক্তি দেয় এবং জীবানুন আসুক হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে তুলসী পাতায় রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়ান অ্যান্টিভাইরাল ও প্রদাহনাশক উপাদান যা ঠান্ডা লাগা, কাশি, গলা ব্যথা ও জ্বরের সমস্যা দূর করে।

তুলসী পাতার চা এর উপকারিতা 


বর্তমানে তুলসী পাতার চা এর উপকারিতা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রায় সব শ্রেণীর মানুষই তুলসী পাতার চা নিয়মিত খেয়ে থাকেন। কারণ তুলসী পাতার চা আমাদের শরীরকে নানা রোগ থেকে মুক্তি দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চলুন তুলসী পাতা চায়ের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:
  • তুলসী পাতার চা রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। 
  • প্রতিদিন এক থেকে দুই কাপ তুলসী পাতা খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং শরীরের শক্তি উৎপাদন করে। 
  • তুলসী পাতার চা নিয়মিত সেবন করলে কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট জাতীয় খাবার বিপাকে খুব কার্যকর ভূমিকা রাখে।
  • তুলসী পাতার চা একে প্রাকৃতিক ঔষধ যা আমাদের শরীর ও মনকে উভয় সতেজ রাখে। 
  • তুলসী পাতা শ্বাসযন্ত্র কে পরিষ্কার করে এবং হাঁপানের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। 
  • তুলসী পাতার চা মানসিক চাপ উদ্বেগ ও ক্লান্তি দূর করে। 
  • তুলসী পাতা চা স্নায়ুতন্ত্র কে প্রশমিত করে এবং ঘুমের মান উন্নত করে। 
  • নিয়মিত তুলসী পাতার চা খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃদযন্ত্র কে সুস্থ রাখে।
  •  তুলসী পাতার চা হজমে পেটের গ্যাস অম্লতা ও বদ হজমের সমস্যা দূর করে।

খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা 

খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্রাচীনকাল থেকেই চিকিৎসকরা তুলসীপাতা কে প্রকৃতির ঔষধ বলে থাকে। তুলসী পাতায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও প্রদান আসুক উপাদান। যা আমাদের শরীরকে ভেতর থেকে সুস্থ রাখে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই থেকে তিনটি তুলসীপাতা খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। 

তুলসী-পাতার-২০টি-উপকারিতা-ও-১৫টি-অপকারিতা

তুলসী পাতা সর্দি-কাশি জ্বর ও গলা ব্যথা প্রতিরোধে সাহায্য করে। খালি পেটে তুলসী পাতা খেলে আমাদের রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। তুলসী পাতা প্রতিদিন সীমিত পরিমানে খাওয়া উচিত। নিয়মিত খালি পেটে তুলসী পাতা সেবন করলে আমাদের শরীরকে সুস্থ হতে ও রোগমুক্ত রাখতে সাহায্য করবে।

শিশুদের তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম

তুলসী পাতা একটি প্রাকৃতিক ঔষধ যা শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তবে শিশুদের জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক মাত্রায় তুলসী পাতা শিশুদের খাওয়ালে ঠান্ডা কাশি জ্বর ও গলা ব্যথার মত সাধারণ সমস্যা দূর করা সম্ভব হয়ে থাকে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নয় খাবারের 30 মিনিট পর দুই থেকে তিন ফোটা তুলসী পাতার রস এবং আদা চামচ মধুর সাথে মিশে শিশুদের খাওয়ানো যেতে পারে। এতে শিশুদের হজম শক্তি বাড়বে এবং শরীরকে জীবাণুমুক্ত রাখবে। 

ছোট্ট শিশুদের ক্ষেত্রে সরাসরি পাতা না খাইয়ে তুলসী পতা সিদ্ধ করে সেই পানি ঠান্ডা করে খাওয়ানো নিরাপদ। তুলছি পাতার চা হালকা গরম শিশুদের দিনে একবার করে দেওয়া যেতে পারে যা কাশি ও সর্দি কমাতে কার্যকর। তবে শিশুদের অতিরিক্ত তুলসী পাতা না খাওয়া নয় উত্তম কারণ এতে এলার্জি ও পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সঠিক নিয়মে এবং পরিমাণমতো তুলসী পাতা খাওয়ালে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শিশুদের স্বাস্থ্য সক্রিয় ও প্রাণবন্ত হয়ে থাকে।

রূপচর্চায় তুলসী পাতার উপকারিতা 

আদিম যুগের মানুষেরা বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ সারাতে ঘরোয়া উপায়ে তুলচি পাতার ব্যবহার করেই রোগ প্রতিরোধ করেছিলেন। কিন্তু তুলসী পাতা আমাদের রূপচর্চায় কতটা উপকারী সেটা অনেকেই জানেন না। সেই কারণে আজকে জানাবো সুন্দর ত্বক পেতে চাইলে রূপচর্চায় ব্যবহার করুন তুলসী পাতা। তুলসী পাতা ত্বক সুন্দর ও মসৃণ করতে সাহায্য করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক রূপচর্চায় তুলসী পাতার কয়েকটি ব্যবহার। 
  • ত্বকে ব্রণের সমস্যা দূর করে 
  • ত্বকের কালো দাগ দূর করে 
  • তোকে জ্বালাপোড়া ভাব ও লালচে দাগ কমায় 
  • ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে সক্ষম 
  • তুলসী পাতার রস ত্বকের জীবাণু ধ্বংস করে। 
  • তুলসী পাতার রস মুখ পরিষ্কার ও উজ্জ্বল রাখে। 
  • রোদে পোড়া ত্বক বা ফুসকুড়ি দূর করে।
  • তুলসী পাতা খুশকী ও চুল পড়া কমায়।
নিয়মিত তুলসী পাতা ব্যবহার করলে ত্বক ও চুল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। এটি কোন ক্ষতিকার রাসায়নিক ছাড়াই ত্বক ও চুলকে করে তুলে উজ্জ্বল কমল ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল।

গর্ভবতী মহিলাদের তুলসী পাতার ব্যবহারে সর্তকতা 

গর্ভবতী মহিলাদের সামান্য পরিমাণ তুলসী পাতা খেলে ক্ষতিকর নয় তবে অতিরিক্ত তুলসী পাতা খেলে এ সময় নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। তাই গর্ভাবস্থায় তুলসী পাতা খাওয়া এড়িয়ে চলায় ভালো। গর্ভবতী অবস্থায় তুলসী পাতায় থাকা কিছু উপাদান জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে যা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়াও তুলসি পাতায় ইউজেনল নামক তিল থাকে যা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে রক্ত পাতলা হয়ে যায়। যদি কেউ ঠান্ডা কাশি বা গলা ব্যাথার কারণে তুলসী পাতার ব্যবহার করতে চান তবে খুব অল্প পরিমাণে তুলসী পাতার চা সেবন করতে পারেন যদিও তা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী। 

গর্ভবতী অবস্থায় মহিলাদের জন্য তুলসী পাতা কাঁচা অবস্থায় খাওয়া বা রস হিসেবে সেবন করা উচিত। তবে অতিরিক্ত তুলসী পাতা সেবনে মহিলাদের ক্ষেত্রে  বন্ধ্যাত্বের কারণ। তাই গর্ভাবস্থায় তুলসী পাতা খাওয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। হাতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গর্ভাবস্থায় যে কোন ভেষজ বা প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী। সঠিক নিয়মে সতর্কভাবে তুলসীপাতা ব্যবহার করলে মা ও শিশু উভয়েই সুস্থতা আশা করা যায়।

চুলের যত্নে তুলসী পাতার উপকারিতা

তুলসী পাতা চুলের যত্নের একটি সাধারণ ভেষজ উপাদান হিসেবে পরিচিত। তুলসী পাতা শুধুমাত্র ধর্মীয় দিক থেকে নয় চুলের যত্ন হিসেবে নামে পরিচিত। তুলসী পাতায় রয়েছে ভিটামিন এ সি ই ক্যালসিয়াম ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা চুলের গোড়ায় শক্ত করে এবং চুল পড়া বন্ধ করে এবং চুলের গড়া মজুদ রাখে। 

তুলসী পাতা রস বা পেস্ট মাথার ত্বকে নিয়মিত আমরা যদি ব্যবহার করে থাকি তাহলে খুশি এবং চুলকানি নিরাময় হবে। তুলসী পাতা ব্যবহারের ফলে এন্টিফাঙ্গাস ও এন্টি ব্যাকটেরিয়াল জমে থাকা ধ্বংস করবে এবং পরিষ্কার রাখবে। এর ফলে চুলের গোড়া শক্ত মজবুত হবে এবং চুল ঘন ও সিল্কি দেখাবে। 

তুলসী পাতা তেল চুলে মাসাজব্যবহারের ফলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। চুলের শুষ্কতা দূর করে এবং প্রাকৃতিক ভাবে চুলকে ফিরিয়ে আনে। তুলসী পাতা ব্যবহারের ফলে চুমকে নরম ও মসৃণ করে তুলে। এছাড়া আমরা তুলসী পাতা প্রাকৃতিক গুন চুলের আগা ফাটা সমস্যা দূর করে এবং রোদ ও দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে চুলকে সুরক্ষা রাখে।

 আমরা তুলসী পাতার ব্যবহার করতে পারি নারকেল তেল বা আমলকি গুড়ো সাথে মিশে। এই মিশ্রণগুলো আমরা সপ্তাহে দুইবার চুলে লাগালে চুল পড়া বন্ধ হবে এবং চুল ঘন ও সুন্দর দেখাবে। তাই চুলের যত্নে আমরা তুলসী পাতা ব্যবহার করে থাকব এবং ব্যবহার করার ফলে প্রাকৃতিক ও কার্যকর এক সমাধান।

কাশির জন্য তুলসী পাতার উপকারিতা

আমরা সকলেই জানি ছোট বাচ্চাদের কিংবা বড় মানুষের কাশি হলে তুলসী পাতা বেটে রস করে খেয়ে থাকে। কাশির জন্য তুলসী পাতা একটি প্রাকৃতিক ও কার্যকরী ঔষধ হিসেবে কাজ করে। এতে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এন্টিভাইরাল এবং এন্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান যা গলা ও শ্বাসনালীকে সংক্রমণ মুক্ত রাখতে সহায়ক। তুলসী পাতার রস বা চা খেলে গলা ব্যথা গলা পরিষ্কার অফ নরম হয় এবং কাশি ধীরে ধীরে কমে যায়। তুলসী পাতা শীতকালীন কাশি ঠান্ডা ও সর্দির সমস্যায় দারুন কার্যকর। 

তুলসী পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে গলার জ্বালাপোড়া এবং কফের সমস্যা কমে যায়। এছাড়া এক গ্লাস পানিতে ১০ টি তুলসী পাতা দিয়ে জাল দিয়ে ফুটিয়ে সেই পানি পান করলে শরীর উষ্ণ থাকে ও শ্বাসনালী পরিষ্কার হয়ে যায়। নিয়মিত তুলসী পাতা খাওয়া শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। তাই কাশির জন্য তুলসী পাতা একটি সহজ নিরাপদ ও প্রাকৃতিক প্রতিকার যা ঘরে বসেই ব্যবহার করা যায়।

শেষ কথা, তুলসী পাতার ২০টি উপকারিতা ও ১৫টি অপকারিতা

তুলসী পাতার ২০টি উপকারিতা ও ১৫টি উপকারিতা সম্পর্কে উপরের লেখাটি থেকে জানতে পারলেন। আসলে তুলসী পাতা প্রাচীনকাল থেকেই সর্দি-কাশি গলাব্যথা বিভিন্ন রোগের জন্যই ব্যবহার হয়ে আসছে। তুলসী পাতায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এন্টি ইনফ্লেমেন্টরি উপাদান যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় শ্বাসনালী সুস্থ রাখে এবং সর্দি কাশি গলা ব্যথা জ্বরসহ নানা শারীরিক সমস্যা কমাতে তুলসী পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

তুলসী-পাতার-২০টি-উপকারিতা-ও-১৫টি-অপকারিতা

এছাড়াও মানুষের চাপ হ্রাস ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এবং ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তুলসী পাতার নিয়মিত ব্যবহার আমাদের শরীরকে প্রাকৃতিকভাবে শক্তিশালী করে এবং আমাদের শরীরে জ্বর সর্দি হলে তা দ্রুত সমস্যা সমাধানে সক্ষম। তবে তুলসী পাতা অতিরিক্ত সেবন করলে কিছু পাসব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। যেমন রক্ত পাতলা করা ওষুধের সঙ্গে সেবন করলে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। 

গর্ভবতী বা স্তন্যদানরত মহিলাদের অতিরিক্ত খেলে গর্ভবতাদের সম্ভাবনা ইত্যাদি হয়ে থাকে। তাই বলা যায় তুলসী পাতা একটি নিরাপদ ও কার্যকর প্রাকৃতিক ঔষধ যা পরিমাণমতো খেলে উপকার হয় আবার অতিরিক্ত খেলে এর পার্শ্বপ্রতিকরাও দেখা দেয়। এরকম আরো তথ্য ও সেবা পেতে আমাদের এই ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন সবাইকে ধন্যবাদ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ক্রিয়েটিভ ভেরিটিনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url